‘অনুপম স্যারের অনুপম ভালোবাসা’

‘তিন বছর আগের ঘটনা। মাস হয়েছে, বেতন দেওয়ার দিন ছিল। একটা ছোট্ট কাগজের খামে টাকাটা নিয়ে তা স্যারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সঙ্গে আরও দু-একজন টাকা দিয়েছিল। মিনিট দুয়েক পর স্যার বললেন, ‘ওয়াহিদ, যাওয়ার সময় দেখা করে যাস তো একবার।’

ভেবেছিলাম স্যার হয়তো কোনো কাজ দেবেন। কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার পর যখন স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম, তখন বুঝলাম আমার ভাবনা ভুল ছিল। স্যার আমায় বললেন, ‘ওয়াহিদ, তোকে বেতন দিতে না করেছিলাম না?’ আসলে এ ঘটনার মাস দুয়েক আগে আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। সেই থেকে স্যার কোনো বেতন নিতে চান না আমার কাছে। মাঝে মাঝে উল্টো আমায় জিজ্ঞেস করতেন যে, টাকার কোনো সমস্যা আছে কিনা।

আমার স্যারের নাম অনুপম দাস। চট্টগ্রামে তাঁর বাড়িটি স্কুলের খুব কাছেই। আমরা স্যারের বাসায় পড়তাম। আগে কখনো জন্মদিনের উৎসব দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু স্যারের বাসায় আমরা যে ১০ /১২ জন পড়তাম, স্যারের উদ্যোগেই সবার জন্মদিন পালিত হতো। অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠান হতো, অথচ তাতে আনন্দের কমতি ছিল না। পহেলা বৈশাখেও সবাই হাজির থাকতাম স্যারের বাসায়। এগুলো হলো আনন্দের স্মৃতি।

তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। যারা পড়া শিখে আসত না, তাদের ‘সম্মানী’ ছিল খুব কড়া। তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ফুট দুয়েক লম্বা একটা বেত। স্যারের কাছে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে এই সম্মানী পায়নি।

তিন বছর পর আজ এসব ঘটনার সারমর্ম বুঝতে পারছি। আজীবন আমার মাঝে বেঁচে থাকবেন অনুপম স্যারের মতো মহৎ প্রাণ। সৌন্দর্য, সুস্থতায় ভরে উঠুক আপনার জীবন—এই কামনা করি।

লেখক: এইচএসসি পরীক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ’

প্রথম আলোতে প্রকাশিত

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *