মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: চট্টগ্রাম কক্সবাজারের বিকল্প একমাত্র প্রধান সড়ক অানোয়ারা-বাঁশখালী পিএবি প্রধান সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বহু গর্তের। গত বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণে পাথর, ইট-সুরকি ও বিটুমিন উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এসব গর্তে আটকা পড়ছে যানবাহন। সড়কের বেশির ভাগ স্থানে পিচ নেই। একটু পরপর বড় বড় গর্ত। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে যানবাহন চলাচল করছে। চট্টগ্রাম শহর হতে বাঁশখালীর উপর দিয়ে কক্সবাজার জেলাসহ চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এ সড়কটি।
বিগত ৫/৬ মাস পূর্বে সংস্কার করা মানহীন নির্মাণ কাজ, অপরিকল্পিত যানবাহন চলাচল ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আনোয়ারা-বাঁশখালীর প্রধান সড়কটি পায়ে হেঁটে কিংবা যানবাহনযোগে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ উপজেলার জনসাধারণ।
দেখা যায়, বৃষ্টি ছাড়াই নোংরা পানিতে পুরো সড়ক সয়লাব হয়ে আছে। সড়কের বড় গর্তে যানবাহন পড়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য এলাকার লোকজন বাঁশে লাল কাপড় বেঁধে এবং জলদী বড় মাদ্রাসার দক্ষিণ পার্শ্বে কচুগাছ লাগিয়ে গর্ত চিহ্নিত করেছেন। এ-চিত্র বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া থেকে চাম্বল বাজার পর্ন্ত অনেক জায়গায় । এতে করে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ এই উপজেলার লক্ষ লক্ষ জনগণের। তারা সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছেন।
আজ (পহেলা আগষ্ট) বুধবার সকালে অানোয়ারা-বাঁশখালী পিএবি প্রধান সড়কের বাঁশখালী পৌরসভা অফিসের সামনে বড় বড় গর্ত হয়ে মালবাহী একটি কার্গো ট্রাক আটকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এই বর্ষা মৌসুম থেকে এ সড়কে যাতায়াতে জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পুকুরিয়া থেকে চাম্বল বাজার পযর্ন্ত অধিকাংশ সড়কে প্রায় পাঁচ শতাধিক গর্ত তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বানীগ্রাম, গুনাগরি, কালিপুর, বৈলছড়ি, হাবিবের দোকান, দেলামিয়ার দোকান,
বাঁশখালী পৌরসভার অলিমিয়ার দোকান থেকে উপজেলা সদর ও টাইম বাজার-চাম্বল বাজার এলাকায় সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ কারণে বাজার এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে।প্রতিদিনই রাস্তার মধ্যে বিকল হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহন। সড়কটির দুরবস্থার কারণে অসুস্থ রোগীদের জরুরী চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
পৌরসদরের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুম আসার আগে ভাঙা সড়ক সংস্কার না করা, সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই পিচ উঠে যাওয়া, সড়কের নকশায় যতটা ভারী বাহনের ক্ষমতা রয়েছে, এর চেয়ে ভারী যানবাহন চলাচল, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই সড়ক প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবৎসর বর্ষার সময় সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করার সময় গর্তের জমে থাকা পানি ছিঠকে এসে পাশের দোকানের ভিতর পড়ে। এই রাস্তাটা বহুদিন ধরে এমন ভাঙা। ময়লা পানি জমে থাকে। মাঝে-মধ্যে গাড়ি উল্টে যায়। সকালে ভাঙা রাস্তায় যানজট লেগে যায়। এই রাস্তা জরুরিভিত্তিতে মেরামত করা দরকার।
আনোয়ারা- বাঁশখালী সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশা (সিএনজি) চালক সমিতির সভাপতি আবদুস ছবুর বলেন, উপজেলার প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরিণ সড়কগুলোর অধিকাংশ এলাকায় গর্ত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব গর্তে প্রায়ই যানবাহন আটকা পড়ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে যানজটও লেগে থাকছে। পাশাপাশি গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আনোয়ারা-বাঁশখালীর পিএবি প্রধান সড়ক জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জন্য বর্ষা মৌসুমে শেষে সংস্কার করার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) দোহাজারী সড়ক বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফাইল মিয়া বলেন, বাঁশখালীর যেসব বাজারে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয় ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা সংঘটিত যে সব স্থানে রাস্তাটি বাঁকা হয় সেসব স্থানের মধ্যে রাস্তার দুই পার্শ্বেই তিন ফুট বৃদ্ধি করে রাস্তা প্রশস্থ করার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বাঁশখালীর শুরু পুকুরিয়া ইউপির চাঁদপুর বাজারের চাঁদপুর ও চন্দ্রপুর পাহাড়ের মোড়, বৈলগাঁও মসজিদের মোড়, বানীগ্রাম বাজারের দক্ষিণে পূর্ব বৈলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাদি মুড়ার মোড়, সাধনপুর ইউপির বানীগ্রাম স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে ব্রাহ্মণপাড়ার টেক ও চারা বটতল এলাকার টেকগুলো সোজা করা হবে এবং পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর বাজার, সাধনপুর ইউপির বানীগ্রাম বাজার, কালীপুর ইউনিয়নের গুনাগরি, রামদাস মুন্সীর হাট ও সাহেবের হাট, বৈলছড়ি ইউনিয়নের কে,বি,বাজার ও হাবিবের দোকান, পৌরসভার জলদী মিয়ার বাজার, উপজেলা সদর, দারোগা বাজার, শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজার, চাম্বল ইউনিয়নের চাম্বল বাজার, পুঁইছড়ি ইউপির নাপোড়া বাজার ও প্রেম বাজারের দুই পার্শ্বে তিন ফুট করে প্রধান সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট চওড়া করে বড় করার কথা রয়েছে।
তাছাড়া সাধনপুর ইউনিয়নের বানীগ্রামে ২টি ও চাম্বল বাজারে দক্ষিণে ব্রীজ সহ ২টি মোট ৪ টি নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হবে এবং চলতি বর্ষা শেষে প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম (১৬) বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ বাঁশখালীবাসী উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ কাজ পরিচালনা করে আসছি, চলতি শুল্ক মৌসুমে ক্রমান্বয়ে রাস্তার কাজ শুরু হবে। বর্তমান সরকারের আমলে বাঁশখালীতে বেশ কিছু উন্নয়ন কার্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। গ্রামীন ৩০ টিরও অধিক সড়ক সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন । তাছাড়া বাঁশখালীতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ।
বর্ষার শেষের দিকে পুণরায় সড়কটি সংস্কার হবে। যাতে সড়কটি ব্যবহারে জনগণ সুফল পায়। যার ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ও অার্থ-সমাজিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। বাঁশখালীবাসীর যোগাযোগের সুবিধার্থে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।