অনলাইন জুয়ার ছোবলে তরুণ সমাজ : প্রতিরোধ দরকার এখনই

ইন্টারনেট নির্ভর জীবনে প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি এর কিছু ব্যবহার আজ অভিশাপ হয়ে উঠছে তরুণ সমাজের জন্য। তেমনই একটি ভয়ংকর উদাহরণ হচ্ছে অনলাইন জুয়া। দিনে দিনে বাঁশখালীসহ সারাদেশের অনেক তরুণই এই ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। সহজেই মোবাইল ফোনে ঢুকে পড়া যায় এই জগতটিতে, আর একবার ঢুকলে বের হওয়া যেন দুঃস্বপ্ন।

কিভাবে ছড়াচ্ছে এই নেশা :

বর্তমানে ইউটিউব, ফেসবুক ও নানা গেম অ্যাপের ভেতরে ঢুকে পড়েছে ‘বেটিং’ নামক জাল। অনেকে ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচে বাজি ধরে টাকা জেতার আশায় যুক্ত হচ্ছে, আবার কেউ কেউ ভিডিও গেম বা ‘লাকি স্পিন’ টাইপ অ্যাপে টাকার বিনিময়ে “বিনোদন” নিচ্ছে।

প্রথমে বিনা পয়সায় শুরু হলেও পরবর্তীতে কিছু জেতার পর তরুণদের মনে আশার আলো জ্বলে। এই আশাই পরে পরিণত হয় নেশায়। বাঁশখালীর আমার পরিচিত এক কলেজ ছাত্র বলেন, “বন্ধুরা আগে খেলতো , আমিও শখ করে খেলা শুরু করি। এখন মনে হয়, এই জগতে একবার না ঢুকলেই ভালো হতো।” শুধু সে না এরকম আরও শত শত তরুণ আজ এভাবে সব হারিয়ে কেউ মানসিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর কেউ আত্মহত্যা করতেছে। কিছুদিন আগের ঘটনা – বাঁশখালীর প্রধান সড়ক সংলগ্ন শিকদার দোকানে অনলাইন জুয়ায় টাকা হারিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে।

ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ :

এই জুয়া কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, মনের ওপরও মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। একের পর এক হার, পরিবারকে না জানিয়ে ধার, মোবাইল বন্ধ করে রাখা, পড়ালেখা থেকে মন উঠে যাওয়া—এগুলো এখন অনেকেরই নিত্য অভিজ্ঞতা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একধরনের আসক্তি, যা ধীরে ধীরে ব্যক্তি ও পরিবার দুটিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেকে হতাশায় আত্মঘাতী চিন্তাও করতে থাকে।

করণীয় কী:

=>পরিবারের করণীয় : সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি রাখা, খোলামেলা আলোচনা করা।

=>শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা : সচেতনতামূলক ক্লাস ও সেমিনার আয়োজন।

=>সরকারি উদ্যোগ : অবৈধ জুয়া অ্যাপ ও ওয়েবসাইট বন্ধে আইনি পদক্ষেপ।

=>তরুণদের করণীয় : নিজের ভবিষ্যৎকে গুরুত্ব দিয়ে এই ধরনের মোহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

আমাদের বাঁশখালীতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও সেই সাথে বাড়ছে অনলাইন আসক্তি। সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে জরুরি আলোচনা শুরু করা। স্কুল-কলেজগুলোতেও এই ইস্যুতে প্রাতিষ্ঠানিক সচেতনতা কার্যক্রম চালু করা এখন সময়ের দাবি।

পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। অনলাইন জুয়া নামক ব্যাধি থেকে তাদের রক্ষা করতে এখনই সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রযুক্তিকে হোক সহায়ক, ধ্বংসাত্মক নয়—এই বার্তাই পৌঁছাতে হবে প্রতিটি ঘরে।


লেখক: জিয়াউদ্দীন আরিফ

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *