অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় বাঁশখালী পৌর এলাকা!
মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের : বাঁশখালী পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার একেবারে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। অল্প বৃষ্টিতেই পানিতে থৈ-থৈ করে পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জলাবদ্ধতার কারণে পথ চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী। বাঁশখালী উপজেলা, থানা, আদালতসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস পৌরসদরে হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষও হচ্ছেন দুর্ভোগের শিকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌরসদরের থানা রোড, দারোগা বাজার-জালিয়াখালী রোড়, উপজেলা প্রধান সড়ক রোড, জলদী মিয়ার বাজার হারুনুর রশিদ সড়ক, আশকরিয়া সড়ক,পৌরসভার সামনে মৌলানা মুহাম্মদ আলী সড়ক,বড়ুয়াপাড়া সড়ক,জলদী মিয়ার বাজার সড়ক, আদালত ভবন সড়ক, উত্তর জলদী খলিল শাহ পাড়া সড়ক ও এলাকাসহ পৌরসদরের অভ্যন্তরীণ রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে পৌরশহরের অভ্যান্তরিন সড়ক গুলো যেন অভিবাবক হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর যাবৎ দেখা যায়,অলিমিয়ার দোকান থেকে পশ্চিম দিকে খলিল শাহ পাড়া চলাচলের রাস্তা,মিয়ার বাজার হারুনুর রশিদ সড়কের বাকী অংশ,খলিল শাহ পাড়া সড়ক,লস্কর পাড়া জমশেদ মুন্সি সড়ক,বাঁশখালী থানার সামনে মহাজন পাড়া সড়ক সহ বাহারউল্লাহ পাড়া হয়ে বড়ুয়া পাড়ার সড়ক ও বাহারউল্লাহ পাড়া মৌলানা মুহাম্মদ আলী সড়ক সহ বিভিন্ন অভ্যান্তরিন সড়ক গুলো চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করে এবং রাস্তা গুলো দিয়ে গাড়ি চলাচলের সময় নানান দুর্ঘটনা ঘটে যা চলাচলের অনুপযোগী। ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, শহরের ব্যবসায়ী, পথচারীসহ অন্যান্যদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত কদিনের বৃষ্টিপাতে শহরের বিভিন্ন অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও খানাখন্দে ময়লা পানিতে ভরা, আবার কোথাও পুরো রাস্তা ময়লা পানির নিচে। থানা রোডস্থ ব্যবসায়ী নোমান বলেন, উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তার পানি দোকানে ঢুকে পড়ে।
উপজেলা সদরের সবজি ব্যবসায়ী শাহেদ উল্লাহ বলেন, প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করেও দীর্ঘবছর ধরে বাঁশখালী পৌরসভার বাজার গুলোতে পৌর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব ও পৌরকর দিয়েও দীর্ঘদিন ধরে নেয়া হয়নি কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড।
বাজারে আসা স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে দেখে জানান, শেড না থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের পলিথিন দিয়ে দেয়া চালার কারণে ছাতা নিয়ে হাঁটাও দুস্কর। ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে হাঁটু পানিতেই বাধ্য হয়ে বাজার সারতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের।
এলাকার ভোক্তভোগী সাধারন জনগন জানান, বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র বিগত এক বছর যাবৎ শুধু তার নিজের ৫ নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন করেছেন।বাকী ৮ ওয়ার্ড়ের প্রতি তার তেমন কোন নজর নাই।চলতি বর্ষা মৌসুমে এই সড়ক গুলো দিয়ে নানান দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে জানান স্হানীয়রা।
এ বিষয়ে বাঁশখালী পৌরসভার প্রকৌশলী লৎফুর রহমান জানান,৬নং ওয়ার্ডের দেব পাড়ার জন্য দ্রুত পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্হার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা,হাজি রফিক উদ্দীন সড়কের কালভার্ট,রুহুল্লাহ পাড়া, দারিয়াপাড়া ও অাচার্য্য পাড়া সহ মোট ৪ টি কালভার্ট নির্মানের জন্য ৫২ লক্ষ টাকা,আশকরিয়া সড়ক ও মিয়ারবাজার সড়কের জন্য প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে এসব রাস্তা ঘাট,ব্রীজ, কালভার্ট উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকার প্রকল্প আমরা পাটিয়েছি।তার মধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা মত আমাদের পৌরসভাকে দেওয়া আশ্রষ পেয়েছি।
বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীর সাথে বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়ক নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সড়কে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। আগামী আগষ্ট মাস থেকেই বাঁশখালী পৌরসদরের প্রধানতম সড়কের সুফল পুরোপুরি পৌরবাসী পাবে।
বাঁশখালী পৌরসভার বিভিন্ন বাজারের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মেয়র জানান, আধুনিক বাজার নির্মাণের লক্ষ্যে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।দ্রুত কাজ সমাপ্ত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাজার নিয়ে পৌরবাসীর আর দুর্ভোগ হবে না বলে মেয়র আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন,আমি ইতিমধ্যে স্হানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে মন্ত্রনালয়ে বাঁশখালী পৌরসভার উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠিয়েছি।ইতি মধ্যে দেড় কোটি টাকা পাস হয়েছে। যদি সরকার ৫ কোটি টাকা করেও দে তাহলে পৌরসভার মধ্যে কোন ধরনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে না।চলতি বর্ষা মৌসুমের পরে খুব শীগ্রই রাস্তা গুলোর উন্নয়নের জন্য টেন্ডার আহবান করা হবে।