আন্তর্জাতিক আদালতের ইতিবৃত্ত

জাতিসংঘের বিচার বিভাগীয় সংগঠন আন্তর্জাতিক আদালত। বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করা, মানব সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ব মানবতার ঐক্য ও সংহতি এবং বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডের হেগ নগরীতে আন্তর্জাতিক আদালত অবস্থিত। এ আদালতের বিচারক উঁচু নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, নিজ নিজ দেশে সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানে বিচারক হওয়ায় যোগ্যতার অধিকারী বা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজ্ঞ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীন বিচারকদের নিয়ে এই আদালত গঠিত। এই আদালতের বিচারক সংখ্যা ১৫ জন। এশিয়া থেকে তিনজন, আফ্রিকা থেকে তিনজন, পশ্চিম ইউরোপ থেকে পাঁচজন, পূর্ব ইউরোপ থেকে দুইজন এবং লাতিন আমেরিকা থেকে দুইজন বিচারক নিয়োগ করা হয়। তবে এক রাষ্ট্র থেকে একজনের বেশি বিচারক নিয়োগ করা যায় না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে বিচারপতি নিয়োগ হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিচারকাজ চালাতে পারেন। তবে বিবদমান রাষ্ট্রগুলো অনুরোধ জানালে ক্ষুদ্র অংশ চেম্বার বসতে পারে। চেম্বারের রায়কে সমগ্র আদালতের রায় হিসেবে গণ্য করা হয়। কমপক্ষে ৯ জন বিচারপতিকে একটি বিচারকাজ চালাতে হয়। বিশ্বের মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে আন্তর্জাতিক আদালতে কোনো দেশের নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে নালিশ জানাতে পারেন না। দুইটি দেশের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে কেবল সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র নালিশ জানাতে পারে। আন্তর্জাতিক আদালতের সংবিধি ৩৪ অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাষ্ট্র কোনো বিচারের বিষয়ে আদালতে পক্ষ হয়ে মোকদ্দমা করতে পারে। ব্যক্তি বা আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনও আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা কোনো মামলায় পক্ষ হতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের পরিধি বেড়েছে অনেকগুণ বেশি। ব্যক্তি নয়, অন্তত কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ করার সুযোগ দেওয়া হলে বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি তথা এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ করার সুযোগ কম থাকে।

লেখক: বেলাল মাহমুদ

শিক্ষার্থী- আইন বিভাগ, আইআইইউসি

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *