মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে ফেলে আসা শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো থেকে ঘুরে আসতে। টাইম মেশিন থাকলে সম্ভব হতো। তবে আমি টাইম মেশিন ছাড়াই আমার কৈশোরের দিনগুলোতে হারিয়ে গেছি কিছু সময়ের জন্য। কীভাবে! খুলেই বলছি…
কাহিনী সংক্ষেপঃ তেরো বছরের এক কিশোরী মেয়েকে নিয়ে কিশোর উপন্যাস ‘কিশোরী ইমু।’ কিশোর বয়সের প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর ইমু কখনও ডানপিঠে দুরন্ত, কখনও শান্ত বিচক্ষণ। অন্যকে সাহায্য করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা ও দুষ্টুমি এসব কাজে অনবদ্য, আবার পড়ালেখায়ও ভীষণ মনোযোগী। তার চরিত্র কিশোর কিশোরীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক। এই তেরো বছরের কিশোরী মেয়েটি গ্রামে বয়স্ক মহিলাদের পাঠদান করে শিক্ষিকা মিতা ম্যাডামের সাহায্যে। তার বিচক্ষণ ও সাহসী ভূমিকায় গ্রামের যুবকরা মৃত্যু মুখ ও ভয়ংকর এক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়। কী সেই চক্র! কারা আছে এর নেপথ্যে? ইমু কীভাবে এতো বড় কাজটা করতে পেরেছিল? জানতে হলে ‘কিশোরী ইমু’ পড়ার বিকল্প নেই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ইমু আমাকে যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে আমার স্কুল জীবনে। আমারই প্রতিচ্ছবি ইমু। স্যারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা সহজ নয়। চক্ষুশূল হতে হয়। কিন্তু ইমু সেই ভয় পায়নি। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগীতা, আবৃত্তিতে প্রথম হওয়া, এডভেঞ্চারাস কাজ, বান্ধবীদের মধ্যে ঐক্য সবকিছু আমার নিজের সাথে এতো বেশি মিলে গেছে যে বইটা পড়ার সময় নস্টালজিক না হয়ে উপায় ছিল না। ভালো লেগেছে লেখনী। কিশোর উপন্যাস হলেও যে কোন বয়সের পাঠককেই টানবে। আর লেখকের গল্পের মধ্য দিয়ে সমাজের অসংগতিগুলো তুলে ধরা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
লেখক পরিচিতিঃ আরকানুল ইসলাম, খুব ভালো একজন ছড়াকার। তার ছড়াগুলো হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর। ছড়াকার হলেও তার প্রকাশিত চারটি বইই কিশোর উপন্যাস। বইগুলো হলো ‘ওরা পাঁচজন, কিশোরী ইমু, তিনবন্ধুর জ্বিনবন্ধু এবং ছোট মামার বড় বিপদ’। চারটি উপন্যাসই পর্যায়ক্রমে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখনী, বিষয়বস্তু সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং প্রচুর পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে। চট্টগ্রামের বাসিন্দা আরকানুল ইসলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধীনে ২০১০ সালে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করেন।
বই থেকে কয়েকটি লাইন-
ইমু ফিসফিস করে বলল, আমরা এখন কোথায় বল তো?
-হলুদবাগানে, দোহা বলল।
-ধুর গাধা! আমরা এখন মহাকাশে। দেখছিস না আমাদের আশাপাশে কত্তো তারা।
-এগুলো তো জোনাকি।
-ভালো করে দেখ। ওগুলো জোনাকি না, তারা। আর আমরা মহাকাশে ভাসছি। মহাকাশে কোনদিন যেতে পারবি? পারবি না। তাই মহাকাশে যাওয়ার আনন্দটা এভাবে নে’।
দোহার হঠাৎ মনে হলো সে সত্যি সত্যি ভাসছে। জোনাকিগুলোও যেন একেকটি তারা।
কিশোর বয়সটা জীবন গঠনের সময় গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ বয়সে ন্যায় অন্যায়বোধ জাগ্রত হওয়া জরুরী। মোবাইল, ভিডিও গেম, টিভি এসব থেকে দূরে রেখে শিশু কিশোরদের যদি এ ধরণের উপন্যাস, সাথে সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আলোর কর্ণদ্বার হবে এটা নিশ্চিত।
আপনার প্রিয় ছোট ভাইবোন, ভাগ্নে, ভাগ্নীদের জন্য ‘কিশোরী ইমু’ চমৎকার উপহার হতে পারে।
এক নজরে ‘কিশোরী ইমু’
লেখক- আরকানুল ইসলাম Arkanul Islam
প্রকাশকাল- অমর একুশে বইমেলা ২০১৬
প্রকাশনী- শব্দশিল্প প্রকাশন
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ- ফারজানা পায়েল
গ্রন্থসত্ত্ব- লেখকক
মূল্য- একশত বিশ টাকা
প্রাপ্তিস্থান- লেখককে ইনবক্স করে পাওয়া যাবে।
লিখেছেন: সালসাবিলা নকী
গল্পকার