বাঁশখালীতে অবৈধ বালু উত্তোলণের রমরমা ব্যবসা, হুমকির মুখে পরিবেশ!

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: বাঁশখালীতে অবৈভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশের বালু।
এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিশাল সিন্ডিকেট। এ নিয়ে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট বিভাগের হাইকোর্টের আদেশ মানছে না এ সিন্ডিকেট। পাহাড়ের পাদদেশে বেয়ে আসা ছড়া হতে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধ্বসে বিশাল ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি।
তার সঙ্গে পাচার করা হচ্ছে গাছ পালা। নষ্ট হচ্ছে রাস্তা ঘাট। পাহাড়ের পাশের ছড়াগুলোর বালু কেটে পাচার করায় এগুলো বর্তমানে নদীর রূপ নিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকান্ডে বাধা না দিয়ে নীরব ভুমিকা পালন করছে। গাছ পাচার, পাহাড় ও ছড়া কাটার ক্ষেত্রে কেউই বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করছে না। পাহাড় কেটে ও ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে।
বিলীন হয়ে যাচ্ছে পাহাড় ও সবুজ বনভূমি, বর্তমানে এই বনভূমি চুনতি অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
সরজমিনে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরির্দশন কালে স্হানীয়রা জানায়, বাঁশখালী দুর্গম পাহাড়ী এলাকা সাতকানিয়া চুনতি সংলগ্ন পূর্ব চাম্বলের হরিনাঘোনা, বড়ডেপা, চরার ঘাট, পাতলা মার্কেট সহ পুরো চাম্বল ইউনিয়ন ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়ি,দক্ষিণ পুঁইছুড়ি সাইরপাড়া ছড়া, নাপোড়া ছাড়া,উত্তর জলদী ৪ নং ওয়ার্ড মনকিপাড়া ছড়া,পৌরসভা -সরল সীমান্ত ছড়া, বৈলছড়ী আজিজিয়া মিল্লিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ছড়া, কালীপুরে ছড়া,পূর্ব বৈলছড়ি ছড়া, পূর্ব চেচুরিয়া, পূর্ব কোকদন্ডি ছড়া,সাধনপুর সাহেবের হাট সংলগ্ন সাধনপুর ইউপি কার্যালয়ের পাশের ছড়া সহ পুকুরিয়া সাঙ্গু নদী থেকে স্হানীয় প্রভাবশালী ক্ষতিপয় রাজনৈতিক নেতা জনপ্রতিনিধি সকলে এই অবৈধ ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে বলে স্হানীয়দের অভিযোগ।যার ফলে এসব বনভূমি এলাকা থেকে একশ্রেণীর স্থানীয় ক্ষতিপয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী চক্র সিন্ডিকেট গঠন করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে টিলা ও ছড়া কেটে বালু এবং মাটি উত্তোলন করে প্রতি ট্রাক ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা হাজার টাকায় বিক্রি করছে। সাথে সাথে বনের গাছ ও কেটে সাবাড় করছে ভূমিদস্যুরা। সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে সরকারী অনুমোদন বিহীন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপত ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।যেভাবে টিলা, ছড়া, পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা খুবই বিপর্যয়। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ চরমভাবে হুমকির মুখে পড়বে।

পুরো এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন রোধে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায় দিন দিন পাহাড় গুলোর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার ফসলী জমি, জীব বৈচিত্র্য, ঘর-বাড়ী, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘট, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ মূলবান জাতীয় সম্পদ বিলীন হওয়ার পাশা-পাশি পরিবেশের বিপর্যয় গড়ছে।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) উপজেলার সাধনপুর ইউপি’র সাহেবের হাট এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছড়া হতে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়।

সাধনপুর সাহেবের হাট সংলগ্ন ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বালু বিক্রয় কারী মোহাম্মদ ছৈয়দ আহমদ জানান, প্রতিদিন তারা ১শ থেকে ২শ ট্রাক বালু বিক্রি করেন । ট্রাক যোগে বালু গুলি বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই দেওয়া হয়। প্রতি ট্রাক বালু ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। এখানে বালু উত্তোলনের কাজে রয়েছে একটি ১২ সদস্যের বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের আড়ালে রয়েছে প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি। তাছাড়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এ সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করে অধিক মুনাফার আশায় প্রভাবশালী বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ছে।
সিন্ডিকেটে রয়েছে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ও প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ।

সাধনপুর এলাকা থেকে এভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বিগত কয়েক মাস পূর্বে বাণীগ্রাম সাধনপুর ইউপি’র উপ-ভূমি অফিসের তহশীলদার দিদারুল আলম বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়েরও করেছিলেন। উক্ত মামলায় থানা পুলিশ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতা আবুল বশর ও এরশাদকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এদিকে আবুল বশর ও এরশাদ উক্ত মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় বেপোরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান।
সদ্য যোগদানকৃত বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে সে যে কেউ হউক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও ভূমি অফিসকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। তাছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের বিরুদ্ধে খুব শীগ্রই পুরো বাঁশখালী ব্যাপী অভিযান ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সাধনপুর সাহেবের হাট এলাকায় বালু উত্তোলনের খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *