
বাঁশখালী টাইমস: পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে বশির আহমদের অভাবের সংসার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দুই ছেলে ইসমাইল ও তানভির ৮ বছর পর্যন্ত সুস্থভাবে চলাফেরা এমনকি স্কুলে গেলেও তারা দুজনই ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধিত্ব বরণ করেন। তাদের কোমর, পিটে ব্যথা শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে পা দুটিও অস্বাভাবিক ভাবে ছোট হয়ে আসে। এরপর হতে দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত তারা হামাগুড়ি দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বন্ধ হয়ে গেছে পড়ালেখা; রুদ্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এই দীর্ঘ সময়ে হতভাগা এই দুই শিশুকে সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থা।
এই দুই ভাইয়ের করুণ কাহিনী ফেসবুকে প্রচার হলে এগিয়ে আসেন বিশিষ্ট সমাজসেবী আহমদ রশিদ বাহাদুর প্রকাশ ব্রাদার বাহার। সমাজসেবার অঙ্গনে সুপরিচিত এই মুখ ব্রাদার বাহার নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য আর্ত মানবতার সেবায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে তিনি একজন নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রসংশিত হয়েছেন। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ কুড়িগ্রামসহ দেশের নানা শীতপ্রবণ এলাকায় তাঁর উদ্যোগে প্রতি বছর হাজার হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়।
ব্রাদার বাহার আজ এই দুই প্রতিবন্ধী সহোদরকে খাট, তোষক, জেকেট ও নগদ টাকা প্রদান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন- ‘আজ আমি অনেক হ্যাপী।
আলহামদুলিল্লাহ!
জোড়া প্রতিবন্ধীদের ঠান্ডা ফ্লোর থেকে খাটে তুলে দিতে পেরেছি।
২০ বছরের ইসমাইল ও ১৩ বছরের তানভির। দুজনই ৮ বছর পর্যন্ত হেটে স্কুলে গেলেও এর পর থেকে পঙ্গু হয়ে গেছে।
তাদের দিয়েছি খাট, তোষক, জেকেট ও নগদ টাকা।
ওদের পিতা বশির আহমদ জানান আজ পর্যন্ত তাকে কেউ নগদ টাকা দেয়নি অথচ টাকা তাদের অনেক দরকার। পরিবারে ৮ সদস্যের মধ্যে ২ জন প্রতিবন্ধী হওয়ায় টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারছে না।
আমি হুইল চেয়ার দিতে চাইলে বশির আহমদ জানান হুইলচেয়ার অন্য একজন দিবে বলেছেন। তাই আমি খাট-তোষকের ব্যবস্থা করেছি।
যাদের টাকা এখানে কাজে লেগেছে আল্লাহ তাদেরকে মাটি থেকে জান্নাতের উচ্চ মাকামে আসীন করুন, আমিন।’
এর সপ্তাহখানেক আগে তাদেরকে দেখতে গিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন- ‘চাঁদের মতো সুন্দর ২টি প্রতিবন্ধি ছেলে
*
অবাক হয়েছি প্রচুর!
এত সুন্দর ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাংলাদেশে দুটি সহোদর প্রতিবন্ধি ভাই টানা ১২ বছর পর্যন্ত কোন রকম সরকারী বা বেসরকারী সহযোগিতা ছাড়া থাকতে পারে ভাবতে অবাক লাগারই কথা।
ঘটনা হচ্ছে গত ৪/৫ দিন আগে MD Wahed ভাইয়ের পোস্টে একটি ভিডিও আপলোড দেয়া হয় যেটা বিশেষ সংবাদ দাতা মো: শহীদুল ইসলাম এর বরাতে ”স্বাধীন কণ্ঠ TV” নামে প্রচারিত হয় ।
উক্ত পোস্টে আমাকে Tag দেন মুহাম্মদ মহিউদ্দীন ভাই । তথ্য সহযোগিতা দেন Tafhimul Islam এবং প্রতিবন্ধিদের পিতার মোবাইল নং দেন MD Wahed । আমি প্রথমে মোবাইলে জোড়া প্রতিবন্ধীর বাবার সাথে কথা বলি এবং আজকে সরাসরি ওদের বাসায় যাই।
ওদের বাড়ি বাঁশখালীর পূর্ব চেচূরিয়ায় এবং বাসা চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট এককিলোমিটার এলাকায়।
দু:খের বিষয় আমি যখন ওদের বাসায় যাই তখন ওদের বাব-মা কেউ বাসায় ছিলো না। শুধু ওরা দুই ভাই ঠান্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি দিচ্ছিলো। ভিডিওটি দেখলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে।
ওদের বাসায় গিয়ে যা দেখলাম,
ওরা খুব কষ্টে আছে। ঘরময় দারিদ্র্যের ছোয়া। হাড় কাঁপানো শীতের মাঝেও ফ্লোরে শূন্য পাকায়/মেঝেতে হামাগুড়ি দিচ্ছে।
বাসায় কোন খাট নেই।
চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার নেই।
সুস্থ করার জন্য সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।
পড়ালেখা করানোর মত সামর্থ নেই।
কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা নেই।
সরকার কিংবা কোন এনজিওর কোনরকম সহযোগিতা নেই।
এত নেই এর মাঝেও ছেলে দুটির মুখে হাসি লেগেই আছে। তাদের চলমান জীবনে যেন কোন সীমাবদ্ধতা নেই। অথচ বয়সের ৮ বছর পর্যন্ত ওরা সুস্থভাবে চলাফেরা করেছে, হেটে হেটে স্কুলে গেছে। ৮ বছরের পরেই ওদের মেরুদন্ডে, পিঠে, কোমরে ব্যথা শুরু হয় এবং একসময় ওরা আর হাটতে পারে না।
পর পর দুই ভাই ৮ বছরের মাথায় এসে কেন থমকে গেল, কী এর রহস্য এটা গবেষণার দাবী রাখে!
যে বয়সে ওদের ব্যাগ পিঠে স্কুলে এবং ব্যাট হাতে মাঠে গিয়ে দূরন্তপনা করার কথা সেখানে দিনরাত দুটি কক্ষে ওরা ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাঁশখালীর অনেক মানুষ আছেন শিক্ষিত সচেতন। কিন্তু ইসমাইল ও তানভিরুল কিভাবে এতবছর পর্যন্ত তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না!! অথচ প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করার মতো সরকারী ভাবেই অনেক ব্যবস্থা আছে। বেসরকারীভাবেও অনেক সংস্থা ও ব্যক্তি এ নিয়ে কাজ করে।
যাই হোক ওদেরকে আমরা অনেক বছর অবহেলা করেছি। কানে চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখার ভান করে থেকেছি।
আর নয়, এবার আসুন পরিবারটির পাশে দাঁড়াই। তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিই। মানুষের মত করে বাঁচার জন্য যা যা দরকার নিজেরা শরীক হই, অন্যদের কাছ থেকে বলে কয়ে আদায় করে তাদের পাশে দাঁড়াই। পর্যাপ্ত কিছু ফান্ড হলে তাদের পড়ালেখাসহ ব্যবস্থা করা যেতো।
জানি ওদের মতো সারা বাংলাদেশে আরো অনেক আছে। আমরা সাধ্যমতো সবার পাশে দাঁড়াবো! মানুষই তো মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য উত্তরসূরী।
সাহস রাখবো মনে
আল্লাহ থাকবেন সনে।
মিডিয়াই পারে ওদের সমস্যার তড়িৎ সমাধান করতে। সংবাদকর্মীদেরও সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’