মায়ের ছবিটি দিনদিন ধূসর হয়ে যাচ্ছে,
 এ্যালবামে যত্নে রাখা ছবিগুলো কালের ধূলোয় নষ্ট হয়ে যায়-
 ঠিক যেনো ডিসেম্বরে আমাদের চারপাশের মানুষেরা রঙ পাল্টায়;
 ক্রমান্নয়ে লাল সবুজের অহংকারী রঙ ম্লান হয়ে ওঠে।
 একাত্তরের মায়ের ছবি এখন আমি শুধু কল্পনায় আঁকি-
 ন’টি মাস বাবার কেমন আউল হয়ে যাওয়া।
 চাচ্চুদের চুপিচুপি মুক্তির ট্রেনিং,
 গোপনে মার্শাল টিটুর দেশ থেকে মহাযুদ্ধের অবশিষ্ট গ্রেনেড ও মাইন আনার যাত্রা-
 তাদের আশির্বাদে মা পূ্ঁজোনিয়ো হয়ে থাকা।
 বাবার অবর্তমানে মা’র রক্তাম্ভরী রূপ!
 এ যুদ্ধ বাঁচার,
 এ লড়াই আত্মসম্ভ্রমের বলে:
 পরিজন নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ প্রতিক্ষণ ।
 প্রতিটি মা যেনো একজন তারামন হয়ে ওঠা।
 যেদিন ঘরে মিলিটারী এলো,
 মা দূর থেকে পাক্কা উর্দুতে চালালো বাতচিৎ:
 ইয়ে মুসলমানোকা গাও,
 তোম উধার যাও-
 মা! এখনতো আমরাই ‘উধার ‘ হয়ে আছি।
 মিলিটারি এলো, মিলিটারি গেলো,
 বাংলার মসনদে বাঙালিই এখন রাজা,
 তবু জনগন রাজা হতে পারলো না,
 তবে বঙ্গবন্ধু মিথ্যা বলেছিলো?
 আমাদের রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে দেখিয়ে-
 মিথ্যাবাদী রাখালের মতো বাঘের পেটে চলে গেলো!
 আমরা এখনও রাজা হওয়া মিথ্যা স্বপ্নে ঘুমিয়ে আছি,
 প্রজাই আছি।
 আমরা কতকাল গেলে রাজা হবো, মহাকাল!
তনুরা এখনও নিখোঁজ হয় মিলিটারি হাতে,
 পুলিশের হাতে হারিয়ে যায় কত শত বাঙাল,
 আমরা এখনও কাঙ্গাল;
 মুক্তিকামি ‘রুমি’রা এখনও পথ খুঁজে,
 রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
 আমরা রাজা হবো… রাজা….আহা…
ডিসেম্বর আসে যায়,
 সবুজ ও লালের রক্তাক্ত পতাকা উড়ে;
 দিন দিন ধূসর থেকে ধূসর হয়ে ওঠে রাজা হওয়া স্বপ্ন;
 ঠিক আমার মায়ের পুরনো ছবির মতো;
 ডিসেম্বরে মায়ের মলিন মুখ আমাকে শুধু কাঁদায়।
 আর চারপাশে শুধু অট্টহাসির শব্দ শুনতে পাই।
 …………..
 ১০.১২.১৬

