পান্থজন জাহাঙ্গীরের কবিতা || নির্জলা মেয়েটি

নির্জলা মেয়েটি
পান্থজন জাহাঙ্গীর

নির্জলা মেয়েটি, যে কখনো আয়নায় দেখতে পায়নি নিজেকে, সতত অন্ধকারকে আলোক কল্পনায় যে হেটেছে দীর্ঘ পথ, কালের যাত্রার ধ্বনি শুনে যে ঘুমিয়ে যেতো কিংবা গৃহপালিত তাজা লাল মোরগটার ঈমানী কন্ঠের তেজোদ্দীপ্ত ডাক শুনে যার ভোর ভাঙতো। তারপর চলতো আটপুরে গৃহকার্যগুলো। হায়রে ! জন্মান্ধ সে কিভাবে দেখবে আজ তার স্বজনদের রক্তের দাগ। রাইফেল, জোড়া বুটের দাপট হিংস্র চলন। রক্ত পিপাসু হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি,তারই বোনকে খামছে ধরা নরপশুদের আনন্দ উল্লাস।

নির্জলা মেয়েটি যে কখনো কাঁদতে পারেনি, সেই শুনছে এখন তার মা বোনদের আর্তনাদ, গলাকাটা লাশগুলোর গলগলে রক্তের স্রোতে কার যেন আওয়াজ, ‘একটু জল বলে…’ কোথায় জল! হাতড়ে বেড়ায়, চারদিকে রক্ত আর রক্ত।

নির্জলা মেয়েটি, সেও সাঙ্গ হতে চেয়েছিল নাফের জলে কোন কাফেলার সাথে, মৃত্যুনদীর গাঙে মরে লাশ হয়ে ভেসে উঠতে। কে জানতো গাদ্দার জোয়ানদের নখরাঘাতে কুঁড়েঘরের কোণে লুকিয়ে থাকা একটি খরগোশের আর্তচিৎকারে আকাশ উড়ে যাবে।

অতপর: মুহুর্মুহু গুলি বেয়নটের খোচা, আগুনের লেলিহান শিখা, শবের স্তুুপে আরো শব, শেষ হয় তার সব অনুভূতির, সব কল্পনার, সব ভয় এবং শোকগাথার।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *