নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম- কক্সবাজারের বিকল্প প্রধান সড়ক আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া উপজেলার একমাত্র সড়কের তিনটি স্পটের তীব্র যানজটে অতিষ্ট হাজার হাজার মানুষ।
প্রতিদিন এই তিনটি স্পটে তীব্র যানজটে কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা জ্যামে অাটকে থাকতে হয়। রাস্তার দুই পার্শ্বে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং রাখার কারণে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। বিগত ১ মাসের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় হারিয়ে গেল অনেক তাজা প্রাণ।
বাঁশখালীর গুনাগরি চৌমুহনী ও উপজেলা সদরে দুইটি গ্রাম পুলিশ(লাইন্সম্যান) ও সিএনজি লাইন্সম্যান থাকলেও তারা প্রতিটি সিএনজি গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে প্রতি গাড়ি থেকে ১০ টাকা করে নেয়।ফলে তারা যানজট আরো তীব্র করে তুলে। এই সিএনজি লাইন্সম্যান/গ্রাম পুলিশ/পৌর পুলিশ তারা প্রতিটি গাড়ি থেকে ১০ টাকা পাওয়ার আসায় রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার কারণে রাস্তা আরো ব্যাপক আকার যানজট সৃষ্টি করে। তারা প্রতিটি গাড়ি থেকে দশ টাকা চাঁদা নেওয়ার জন্য ইচ্ছে মত যাত্রী তুলে রাস্তায় যানজটের তীব্র আকার ধারণ করে।
চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া লাগামহীন অবস্থায় পৌঁছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বছর সিএনজি চালিত অটোরিক্শা ভাড়া নির্ধারণ করলেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খেয়াল-খুশিমত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের নিকট
থেকে।
অন্যদিকে এই উপজেলায় ৫/৬ হাজার নাম্বার বিহীন অটোরিক্সা রয়েছে। এই গাড়ী গুলোর চালকও রয়েছে লাইসেন্সবিহীন, ফলে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। সিএনজি চালিত অটোরিকশা রাতে চলাচলকারী অনেক গাড়ীতে ভিন্ন রঙ্গের লাইট ব্যবহার করায় অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
অন্যদিকে যানজটের শেষ নেই।
এদিকে বাঁশখালী উপজেলা সদরের দারোগা বাজার এলাকায় রাস্তার দু পার্শ্বে বাস গাড়ি রাখে, যার ফলে প্রতিদিন তীব্র যানজট লাগে।
বাঁশখালী, আনোয়ারা ও চকরিয়া সড়কে প্রতিদিন ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা । ফলে এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি বেড়ে যায়। এমন কি অটোরিক্শা চালকদের সাথে অনেক যাত্রীর হাতা-হাতিও ঘটছে। আর অসহায় যাত্রীরা হয়ে পড়েছেন জিম্মি। ভাড়া-নৈরাজ্য চরমে
পৌঁছেছে।
সরকারিভাবে কি:মি: হিসেবে নির্ধারণ কলেও আগের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে। বাঁশখালী ও সাতকানিয়া সড়কে চলাচলকারী অটোরিক্শার চালকরা। শ্রমিক নেতারা ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করেছে, আদায় করছে অটোরিক্শা চালক। যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতেও রাজিও হয় না।
সরকারিভাবে অটোরিক্শা ভাড়া নির্ধারণ অনুযায়ী প্রথম ২ কি:মি: ভাড়া ৪০ টাকা, পরে প্রতি কি:মি: ১২ টাকা। কিন্তু তার চেয়ে দ্বি-গুণ ভাড়া আদায়
করে যাচ্ছে চালকরা।
গতকাল বুধবার বিকালে বাঁশখালীর গুনাগরী চৌমুহনী থেকে সাতকানিয়া রাস্তার মাথায় যেতে চাইলে গুনাগরীর অটোরিক্সা চালকরা এই প্রতিবেদকের কাছে ১শ টাকা ভাড়া দাবি করে। এই ষ্টেশনের গাড়ী ছাড়া অন্য কোনো ষ্টেশনের গাড়ী এইখান থেকে যাত্রী নিতে চাইলে গুনাগরী শ্রমিক নেতারা বাধা দেয়। ঘন্টা ২/১পরে ষ্টেশন থেকে কিছু দূরে গিয়ে সাতকানিয়ার একটি অটোরিক্সা করে ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে এই স্থানে যান তিনি।
রাস্তার মাথায় অটোরিক্সার যাত্রী এক এনজিও কর্মীর সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, গত রমজানের ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু এখনও ভাড়া কমাননি চালকরা। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কাগজে-কলমে প্রাইভেট সার্ভিস থাকলেও লোকাল যাত্রী নিয়ে চলে।
এদিকে বাঁশখালীর পুকুরিয়া চৌমুহনী হইতে চাঁদপুর চৌমুহনী (৩ কি:মি) এখানে সিএনজি অটোরিক্সার সরকারি নির্ধারণ অনুযায়ী প্রাইভেট ভাড়া হয় ৩০ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ৮০-১শ টাকা। চাঁনপুর হইতে গুনাগরী (৫ কি:মি) এখানে ভাড়া নেওয়া হয় জনপ্রতি ১০ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে তিন গুন। গুনাগরী হইতে জলদী (৫ কি:মি) এখানে জনপ্রতি ভাড়া হয় ১০ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা। গুনাগরী হইতে মোশারাফ আলী মিয়ার বাজার (৪ কি:মি) এখানে প্রাইভেট সিএনজি ভাড়া নেওয়ার কথা ৫০ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ১শ টাকা। জলদী হইতে চাম্বল বাজার (৫ কি:মি) এখানে প্রাইভেট হিসেবে ভাড়া হয় ৫০ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে দ্বি গুন। জলদী হইতে প্রেম বাজার (৮ কি:মি) এখানে সিএনজির প্রাইভেট ভাড়া হয় একশত টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ২শ টাকা। বাঁশখালীর গুনাগরী হইতে সাতকানিয়ার ফুলতলা (৫ কি:মি) এখানে ভাড়া হয় ৭৬ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ১শ ৫০ টাকা। গুনাগরী হইতে সাতকানিয়ার দেওদিঘী (সাড়ে ৬ কি:মি) এখানে ভাড়া হয় ৯৪ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ২শ ৫০ টাকা। গুনাগরী হইতে সাতকানিয়ার ডলুব্রীজ (সাড়ে ৭ কি:মি) এখানে ভাড়া হয় ১শ ৬ টাকা, কিন্তু
ভাড়া নিচ্ছে ৩শ টাকা। গুনাগরী হইতে সাতকানিয়ার রাস্তার মাথা (সাড়ে ৯ কি:মি) এখানে ভাড়া হয় ১শ ২৪ টাকা, কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ৩৫০ টাকা। এসব ভাড়া আদায়ে কখন ও সিএনজি কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
একইভাবে বাঁশখালী আনোয়ারা পিএবি প্রধান সড়কের প্রায় জায়গায় ভাড়া আদায় করছে সিএনজি শ্রমিকদের দাপটে। একইভাবে প্রায় সময় ভাড়া দিয়ে আসছে সাধারণ যাত্রীরা। অফিস সময় শেষে সন্ধ্যা নামতেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে নতুন ব্রীজে (শাহ আমানত সেতুর উত্তর এবং দক্ষিণ পাশ)। অপেক্ষারত মানুষের কানে মুহুর্মুহু আওয়াজ তুলছে উঠা-নামা পঞ্চাশ, উঠা-নামা একশ, দু্ইশ এভাবেই। ২৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা, ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
নতুনব্রিজ থেকে দৈনিক শতাধিক বাস ও হাজারের মত সিএনজি অটোরিক্সা ছেড়ে যায় আর যাতায়াত করে অর্ধলক্ষেরও বেশি মানুষ। পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী পিএবি সড়কে ছেড়ে যাওয়া বাসের মধ্যে রয়েছে বাঁশখালী স্পেশাল, সুপার সার্ভিস সহ আরো অনেক।
আর এই দৃশ্য কোন নতুন কিছু নয়। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার আর ধর্মীয় উৎসব আসলেই নিজেদের ত্রাস রাজত্ব কায়েম করে বাস চালক-মালিক সিন্ডিকেট। এদের নৈরাজ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয়-জাতীয় পত্রিকায় বারবার খবর ছাপানো হলেও দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কড়া কেউ নাড়তে পারে না বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু পরিবহন নেতারা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এইভাবে কতিপয় অটোরিক্সা চালক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলেছেন। অতিরিক্ত ভাড়া না পেলে চালকরা খারাপ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রীরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম- কক্সবাজারের বিকল্প বাঁশখালী পিএবি প্রধান সড়কের দু-পাশে অবৈধ স্থাপনা, যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং ও নিত্য দিনের যানযট নিরসনের লক্ষ্যে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারী থেকে মাঠে নামছে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাঁশখালী উপজেলা সদরের দারোগা বাজার এলাকার ডাক বাংলো তো অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা ও থানা প্রসাশনসহ ১৪ ইউপি চেয়ারম্যানগণ, বাস-অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা ও বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সম্পাদকগণ সভায় সর্বসম্মতিক্রেম ২৯ ফেব্রুয়ারীর পূর্বে স্ব স্ব উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
অটোরিক্সা চালক মো:সেলিম ও মামুনুর রশিদ জানান, প্রতি ষ্টেশনের লাইনম্যান কে টাকা দিয়ে যাত্রী নিতে হয়, টাকা কি আমরা বানাই নাকি?,যাত্রীদের কাছ থেকে না নিয়ে কোথায় পাব। প্রতি বছর দুই ঈদেও মৌসুমে যাত্রীদের বলে-কয়েক টাকা ভাড়া বেশি নিয়েছিলাম, তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আমরা অতিরিক্ত ভাড়া নিয় এটাও সত্য। সবাই যখন নেন তখন আমরা ও নিই।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী প্রেমানন্দ দাশ বলেন,
প্রতিদিন নতুনব্রীজ থেকে অফিসে যান। যার দুরুত্ব ৪৪ কি.মি। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া হওয়ার কথা ছিলো ৬৩ টাকা। কিন্তু তাকে দিতে হচ্ছে ৮০ টাকা। তবে বৃহষ্পতিবার বা কোন বিশেষ দিন আসলে সেই ভাড়া হয়ে যায় ১০০ টাকার উপরে। তার ভাষায়, ‘কিছু করার নেই। অনেক নিউজ দেখলাম, কই অবস্থার তো কোন পরিবর্তন হয় না। মানুষ জিম্মি তাদের কাছে। এটি প্রতিদিনের চিত্র। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলেই শুরু হয় বৈচিত্রতা। রচিত হয় নতুন ব্রীজের সংবিধান আর আদায় হয় গলাকাটা ভাড়া ।
বাঁশখালী অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আব্দুচ ছবুর বলেন, সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করছে শহরের জন্য, গ্রামের কোনো ভাড়া নির্ধারণ নেই, গ্রামের আমরা যেইভাবে নির্ধারণ করি সেই ভাবে আদায় করে চালকরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চালকদের পোষায়মত ভাড়া নিতে নেয় বলে শুনি তবে কেউ আমাদের অভিযোগ করেননি। বর্তমানে অটোরিক্স গুলো কক্সবাজার অঞ্চলিক মহা সড়ক মইজ্জারটেক এলাকায় যেতে গেলে পটিয়া ক্রসিং থেকে পুলিশ তাদের চলাচল করতে দেয় না এবং বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিকদেরও টাকা দিয়ে টোকেন নিয়ে গাড়ী চালাতে হয়, এই কারণে ভাড়া একটু বেশি নিতে হয়।
বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক জানান, উপজেলা সদর সিএনজি ষ্টেশনের গাড়ীতে করে কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ পর্যন্ত যেতে অটোরিক্সা ভাড়া নেয় ১০০টাকা। এই ষ্টেশনের আগে বা পরে থেকে অন্য কোন ষ্টেশনের গাড়ীতে করে গেলে ৫০-৬০ টাকা, বাঁশখালীর মত ভাড়া অন্য কোনো এলাকায় নেই।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সালাউদ্দীন হীরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যানযট সমস্যায় বাঁশখালীবাসী অতিষ্ট ছিল। জনসাধারণের সেই কষ্ট লাঘবে উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যানযট নিরসনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তাছাড়া আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারী হতে থানা পুলিশ এ লক্ষ্যে মাঠে কাজ করবে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, অন্যায় ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী মাসের শুরুর দিকে প্রধান সড়কে অভিযান পরিচালনা করব।