বাঁশখালীর কৃষকদের পাশে ‘কৃhttp://www.kizkitchen.com/2018/01/31/bookfair-2018-jaglul-haidar/ষকের বাজার’

বাঁশখালী টাইমস: নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের হাত থেকে সামাজিক ব্যবসার মডেল উপস্থাপন করে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বাঁশখালীর কৃতি সন্তান তরুণ উদ্যোক্তা আশিক সায়েম চৌধুরী।

আরও সুখের খবর- কৃষকের বাজার নামক সামাজিক ব্যবসার সূচনাটাও বাঁশখালীর ইলশা গ্রাম হতে।

কৃষকদের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জীবনযাত্রারমান বৃদ্ধির পরিকল্পনা হিসেবে এই সংগঠনের মুল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের নিয়ে একটি যুগোপযোগী সামাজিক ব্যবসায় সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করা।

এই সংগঠন কৃষকদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা নিবারণ ও সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতন করাও অন্যতম লক্ষ্য এ সংগঠনের।

বিভিন্ন নগরে ও শহরাঞ্চলে ‘মিনা বাজার’ ‘আগোরা’র মত সুপারশপ আছে বিত্তবানবান ও মধ্যবিত্তদের স্বাস্থ্যসম্মত ও ন্যায্যমূল্যের নিরাপদ কৃষিপণ্যের বাজার সুবিধা প্রদান করার জন্য। কিন্তু যারা নিম্নআয়ের মানুষ বিশেষত কৃষি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য গ্রামে তাদের জন্য কোন বিকল্প বাজার ব্যবস্থা নেই যেখানে কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই স্বাস্থ্যসম্মত কৃষিপণ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার করা যায়।

এ সংগঠন কৃষকদের জন্য গ্রামকেন্দ্রিক একটি বিকল্প বাজার ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বাঁশখালী টাইমসকে জানালেন- কৃষকের বাজারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশিক সায়েম চৌধুরী।

তিনি আরো জানান- যেখানে সামগ্রিক (হিলষ্টিক) বাজার ব্যবস্থার বিজনেস-টু-বিজনেস মার্কেটিং কাজে লাগিয়ে কম দামে পুষ্টি চাহিদা দেওয়া যাবে। যুগপৎভাবে “ভোক্তা সমবায় সমিতি” ও উৎপাদক সমবায় সমিতিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একতাবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষুদ্র উৎপাদনকারিদের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও মুলধনের অভাব সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমরা তাদেরকে একটি নতুন সামগ্রিক (হিলষ্টিক) বাজারব্যবস্থা তৈরি করে দেবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যা কিনা তাদের উপার্জনক্ষমতা দিয়ে তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার প্রয়াস চালিয়ে যাবে।

“খাদ্য ঋন পলিসি” হল এমন একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প যার বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদেরকে মুদ্রাস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করে বিকল্প সামগ্রিক (হিলষ্টিক) বাজারব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া গেলে, খাদ্য ও কৃষিপণ্যের চাহিদা ও যোগানের সামঞ্জস্য রেখে উচ্চমূল্যের বিপরীতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি হবে । অর্থনৈতিক কৃষিপণ্যের উৎপাদনে উচ্চ সুদভিওিক ঋনের বিপরীতে মুনাফাভিত্তিক মুলধন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে। শুধুমাত্র কৃষকদের পুষ্টিচাহিদা নিবারণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এই কার্যক্রম চলছে।

কৃষকদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা, ক্রয়ক্ষমতা,স্বাস্থ্যসচেতনতার দিকসমূহ, বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা, নিরাপদ খাদ্য ও কৃষিপণ্য, উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত বীজ,সার ইত্যাদি সম্পর্কে সম্মক ধারণা, নির্দিষ্ট অঞ্চলের কৃষি বিভাগের অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের উপর জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের ভিত্তিতে পরিকল্পনা তৈরি হয়।

একটি বৈজ্ঞানিক পুষ্টিচাহিদা পদ্ধতি দিয়ে বের করে সেই অনুযায়ী ক্রয়ক্ষমতার পরিধিকে মানদন্ড রেখে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা মেনে বাজারব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। সুতরাং তাদের সঠিক পুষ্টিচাহিদার দিক নির্দেশনা দেওয়া যাবে।

নিয়মিত কার্যক্রমের একটি হল – প্রতি মাসে কৃষকদেরকে নিয়ে পুষ্টি চাহিদা বিষয়ক সেমিনার এর আয়োজন। এতে তাদেরকে বিভিন্ন কৃষিক্ষেত্রে উন্নত দেশের কৃষকদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানানো হবে। ফলে তারা নিজেদের তুলনামূলক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। সরাসরি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। রাসায়নিক সার মুক্ত শাকসবজি উৎপাদনের গুরত্ব তুলে ধরে এর বৈজ্ঞানিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে বিনিয়োগকারী-কৃষকদের সমন্বিত প্রয়াসে উৎসাহিত করা হবে। প্রাকৃতিক সার দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি নিয়ে গবেষণা করা, বাজারজাত করা ও গণসচেতনতা তৈরি করার ব্যাপারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসায়ের সাতটি মৌলিক নীতিকে আদর্শ হিসেবে মেনে চলা হবে।
এভাবে কৃষকরা দারিদ্রতা বিমোচনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দুরবস্থার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবে বলে “কৃষকের বাজার” এর তরুন উদ্যোক্তারা কাজ করে যাচ্ছে। বি-টু-বি তাদেরকে একতাবদ্ধ হয়ে মধ্যস্থ ব্যবসায়িদের দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা করবে।

আশিক সায়েম বলেন- ২০১০ সালের শেষের দিকের কথা। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণনবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। নিজস্ব বাগান থাকাতে কৃষিভিত্তিক বিপণনব্যবস্থায় আমার আগ্রহ ছিল। তখন আমি বাঁশখালী অঞ্চলের কিছু কৃষকের সাথে কৃষিবিপণন কে কাজে লাগানোর জন্য অর্থনৈতিক কৃষিপণ্য সম্পর্কে আলাপ করে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরেছিলাম। ক্ষুদ্র কৃষি উৎপাদনকারিদের ঘিরেই মধ্যস্থ ব্যবসায়িদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। নিরাপদ কৃষিপণ্য সম্পর্কে তারা সঠিকভাবে অবগত হয়না। প্রাচীনকালের প্রাকৃতিক উৎপাদনের স্বাবলম্বী অবস্থা হারিয়ে এখন রাসায়নিক সারের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে খাদ্যব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। তখন থেকেই কৃষকদেরকে পুষ্টিচাহিদা নিয়ে উজ্জীবিত করার জন্য কিছু একটা করতে মন চাইছিল। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সাউথ এসিয়ান ইয়ুথ সোসাইটির উদ্যোগে “সামাজিক ব্যবসা” শীর্ষক তিন দিনের একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অংশগ্রহন করলাম। সেই সেমিনার থেকে বুঝতে পারলাম যে সামাজিক ব্যবসায় কৃষকদের সাধারণ অর্থনৈতিক সমস্যার একটি ভাল সমাধান হতে পারে। এটি একটি নতুন প্রজন্মের অর্থনৈতিকভাবে টেকসই ব্যবসায় ধারনা। ২০১২ সালের ২৯ শে জুন রাজধানী ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভা্র্সিটিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক ব্যবসার উপর একটি সামিট হয়। সেখানে “নতুন সামাজিক ব্যবসায়” ধারণার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত প্রতিযোগিতার মধ্যে আমাদের “কৃষকের বাজার” নামক সামাজিক ব্যবসায়ের আইডিয়াটি অন্যতম আইডিয়া হিসেবে স্বীকৃতি পায় ও অভিনন্দিত হয়।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *