সাইবার ক্যাফে ও আমাদের তরুণ প্রজন্ম
তোমরা যারা সাইবার ক্যাফে ব্যবসার মাধ্যমে কম্পিউটারকে পিছন দিক ঘুরিয়ে তরুণ ছেলেদেরকে সেটেলাইট বিশ্বের পর্ণো-পল্লি’তে অবাধ প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছো, তোমরা কী বুঝতে পারছো তোমরা তাদের কত বড় ক্ষতি করছো! দিনের পর দিন!
শুধু কি তাদের ক্ষতি? এটা সমাজের ক্ষতি, এটা দেশের ক্ষতি। এতে একটি পরিবারের বন্ধন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তা কি বুঝো না? এখান থেকেই সাইবার ক্রাইম এর সূত্রপাত নয়কি? তারা মেমোরির মাধ্যমে নিজেদের ইন্দ্রীয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী জ্বেনা-ব্যভিচারের উপকরণ নিয়ে যাচ্ছে তা তোমরা জেনেও না জানার ভান ধরে আছো। ১০ টাকার জন্য, ১৫ টাকার জন্য, বড় জোর ২০ টাকার জন্য।
অথচ ঐ ছেলেকে মানুষ করবার জন্য ওর বাবা খরচ করছে হাজার হাজার টাকা, কেউ কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। স্কুল পড়ুয়া এসব ছেলেদের সাথে সাইবার ক্যাফেতে অনেক সময় মেয়েবন্ধুও দেখা যায়। কি লজ্জা!
একটি সাইবার ক্যাফেতে ৫/৬ টি কম্পিউটার বসিয়ে দিনে কয় টাকা কামায় কর? ৪০০ টাকা? ৫০০ টাকা? কিংবা ৬০০ টাকা?
জ্বেনা-ব্যভিচারের উপকরণ বিক্রির এই টাকা কি হালাল হবে? তুমি শিওর? টুপি পড়ে মসজিদে যেতে দেখলে, শুক্রবারে জুমাতে দেখলে বুঝা যায় তুমি মুসলমান। কিন্তু হালাল উপায়ে ইনকাম করার তোমার সৎ সাহস নেই কেন? তোমার যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে ঐ কম্পিউটারগুলো সামনের দিকে ঘুরিয়ে দাও যাতে কম্পিউটার ব্যবহারকারী কি করছে সবাই দেখতে পায়। তারপর রিজিকের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা কর। ঢাকায় দেখেছি সাইবার ক্যাফেতে কম্পিউটার সামনের দিকে ঘুরানো এবং পর্ণোসাইট ব্লক। এই সৎ সাহসী ব্যবসায়ীদের জন্য স্যালুট।
আজকের দাবীঃ চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সাইবার ক্যাফেতে সকল কম্পিউটার সামনের দিকে ঘুরিয়ে ইন্টারনেটে পর্ণোসাইট ব্লক করে রাখা হোক। অতঃপর আশা করা যেতে পারে তথ্য-প্রযুক্তির পজেটিভ ব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্ম থেকে বেরিয়ে আসছে বিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারসহ নানা সৃষ্টিশীল কারিগর। প্রবাসী বাবাটি বিদেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে দেশে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ পাঠাচ্ছে। দেশের বাবাটি সংসারের খরচ যোগাতে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরতে দেরী হয় বলে হয়তো সন্তানকে চোখে চোখে রাখতে পারছে না।
পরিবারের সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বের হয়ে ছেলেটি সঙ্গ দোষে সাইবার ক্যাফেতে প্রবেশ করছে। অথচ স্কুল জীবন শেষ করার আগে তার সেখানে যাবার তেমন দরকারই নেই। এখানে যারা যাচ্ছে তাদের ব্রেন একপ্রকার নেশাতুর মাদকতায় বুধ হয়ে থাকছে। তারা সাইবার নিকোটিনে আসক্ত হচ্ছে। জামা-কাপড়ের ভিতরে তাদের মানবদেহের খোলস আছে বটে তবে তাদের আত্মার ভিতর দ্বিতীয় আরেকটি আত্মা ঐ সাইবার নিকোটিন দখল করে আছে। ফিজিক্যালি এর নেতি বাচক প্রভাব দেখতে হয়তো আরো ৭/৮ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ঠিক কি পরিমান খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে জাতি তা আমি এ মূহুর্তে অনুমান করতে পারছি না। তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায় এর স্বীকার যেমন বিরোধী দলের সন্তানরা হবেন তেমনি হবেন সরকারী দলের সন্তানরাও। সেনাবাহিনী, পুলিশ-বাহিনী, জজ-ব্যারিস্টার, আলেম-মুক্তার সকলের সন্তান এই নেতিবাচক পরিস্থিতির স্বীকার হবেন।
সচেতন হবার সময় চলে যাচ্ছে। এদেশ আমাদের। দেশের আগামীর কর্ণধার সন্তানগুলোও আমাদের। তাদেরকে যোগ্যতর সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের।
আসুন নতুন প্রজন্মকে মেধাহীন, নঃপুংশক, অলস, অকর্মণ্যতা থেকে রক্ষা করি, সাইবার নিকোটিন থেকে রক্ষা করি। সামাজিক সাইট নামের লাইক-কমেন্টের নেশা থেকে রক্ষা করি।
যুদ্ধবাজ সৈনিকের লৌহকঠিন বর্মের মত সুরক্ষিত স্থানে তাদের আত্মা ও স্বত্মার নিরাপত্তা দিই।
লেখক:
-এ আর বাহাদুর বাহার (ব্রাদার বাহার)
( লেখক ও সমাজকর্মী )
28/06/2018